Background

Myspace HTML Codes & Layout Generators
Myspace Backgrounds

বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা




এক নজরে গবেষণা

গবেষণার শিরোনাম:- বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা
গবেষক :- মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
স্থান:- নোয়াখালী সদর ও এর পার্শ্ববর্তী তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়
সময় কাল: আগষ্ট, সেপ্টেম্বর ২০০৮
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী: তিনটি স্কুলের ৩৬ জন কিশোর কিশোরী এবং
সংশ্লিষ্ট ৩৬ জন অভিভাবক
গবেষণার পদ্ধতি: অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণা


বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

ভূমিকা
মানুষের জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। যেমন - ছোটবেলা একরকম, কিশোর বয়সে একরকম, আবার বড় হয়ে যাওয়ার পর অন্যরকম। তবে, সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আসে কৈশোরে। শিশুকাল আর যৌবনের মাঝামাঝি সময়কে বয়ঃসন্ধি কাল বা কৈশোরকাল বলে। এরা কিশোর কিশোরী। এ বয়সে এরা আরো বেশি বুঝতে শেখে। অনুভব করতে শেখে, বাইরের পৃথিবী এবং জীবন সম্পর্কে আরো বেশি জানতে চায়।
১০ বছর থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত সময়কে বলে বয়ঃসন্ধি কাল। কেউ বলে উঠতি বয়স। শরীরের গঠন আর পুষ্টির উপর ভিত্তি করে সাধারণত ১০-১২ বছর বয়সে এদের শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়।
এ সময় কিশোর -কিশোরীরা বেড়ে উঠে। একেক জনের শরীর যেহেতু একক রকম। তাই কেউ বড় হয় তাড়াতাড়ি আর কেউ বা একটু দেরীতে। দেহের চাহিদা অনুযায়ী এ সময়ে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করলে শরীরের বৃদ্ধি পুরোপুরি হয়।
এ বয়সে ছেলেদের উচ্চতা বাড়ে, কাঁধ চওড়া হয়, মাংসপেশী শক্ত হতে থাকে। মুখে দাড়ি গোঁফ গজাতে শুরু করে ও কন্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়।
মেয়েদের শরীর ও এ বয়সে বাড়তে থাকে। মেয়েলি পরিবর্তনগুলো শুরু হয় এবং চেহারায় লাবন্য আসে। এই পরিবর্তনগুলি হচ্ছে একটি ছেলে বা মেয়ের বড় হওয়ার লণ। বয়ঃসন্ধিকাল মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক পরিবর্তন ঘটার ফলে মানসিক পরিবর্তনও শুরু হয়। এ সময় তাদের মনে নানা প্রশ্ন উঁকি দেয়। মন চঞ্চল হয়ে উঠে। মনের ভিতর দ্বিধা দ্বন্দ্ব আর আবেগ অস্থিরতা বেশি কাজ করে। এসময় ছেলেমেয়েরা নিজেদের বড় ভাবতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবে এ বয়সে তারা শরীর, চেহারা, পোশাক ও আচার-আচরণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে। কখনো মন বিষন্ন হয়ে উঠে আবার কখনো মন খুশিতে ভরে যায়। এসময় অনেকে একা থাকতে চায়। কারো সাথে মিশতে চায় না। আবার দল বেঁধে হৈচৈ করে অন্যেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় এরা। তাদের মনে স্বাধীন ও স্বনির্ভর হওয়ার ভাবনা আসে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের সাথে বাবা-মা ও পরিবারের আচরনের তারতম্য বেশি দেখা যায়
আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের সমান চোখে দেখা হয় না এবং তাদের সাথে একই রকম ব্যবহার করা হয় না। জন্মের পর থেকে মেয়েরা বিভিন্ন ভাবে বৈষম্যের শিকার হয়।
এসময় মেয়েরা নিরাপত্তার অভাবে ভোগে। কেউ কেউ এ সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। অনেক সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক ছেলে বা মেয়ে মানসিকভাবে কষ্ট পায়। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং স্বাভাবিক হতে পারে না।
তাই এসময় নিজের চিন্তা এবং সমস্যাগুলি যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আলাপ করে নেয়া যায় এবং সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করা যায়। তাহলে বিভিন্ন সমস্যা সহজে সমাধান করা যায়।


ল্ক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
বয়ঃসন্ধিকাল মানুষেরে জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময়। এবয়সে একটি ছেলে বা মেয়ে প্রবেশ করে এক অজানা জগতে। চরম কৌতুহল নিয়ে সে দেখে তার চারদিকের পৃথিবীকে। এ সময় তার শারিরীক ও মানসিক অভুতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু আমাদের দেশের সামাজিক প্রোপটে এ সময়টা থাকে সবচেয়ে বেশী উপেতি। কিশোর কিশোরীরা অজ্ঞতার কারনে সঠিক পরিচর্যা পায়না। শহর ও গ্রামের এলাকা ভেদে এদের চাল চলনের ধরণ হয় আলাদা। সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই এরা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে। অবিভাবকরাও এ বয়সকে সহজ চোখে দেখতে চান না। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা থাকেন একেবারে উদাসিন। আবার মেধা বিকাশেও চরম বাধার সম্মুখে পড়তে হয় এদের। তখন নষ্ট হয় উজ্জল সম্ভাবনা। জাতি হয় তিগ্রস্ত।
এ পরিপ্রেক্ষিতে নোয়াখালী জেলার শহর শহরতলী ও গ্রাম পর্যায়ের তিনটি স্তরের এই কিশোর কিশোরীদের বিভিন্ন সমস্যা ও এর সমাধানের পথ অনুসন্ধান এবং তাদের অবিভাবকদের মানসিকতা পর্যালোচনা করাই ছিলো এই গবেষণার মূল ল্য ও উদ্দেশ্য।


সমীক্ষা ও পদ্ধতি
এ গবেষণাটি সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণার পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়েছে। এটি পার্টিসিপেটরি একশান রিসার্স(পার) বা অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণা। এ গবেষণাটিতে কোনো ভাবেই গতানুগতিক অন্যান্য গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। এ গবেষণার জন্য নোয়াখালী শহর, গ্রাম ও শহরতলীর তিনটি স্কুলকে বাছাই করা হয়েছে। এসব স্কুলে রয়েছে সহ-শিা বা কো-এডুকেশন। প্রতিটি স্কুল থেকে ১২ জন করে শিার্থী বাছাই করা হয়েছে। দুটি স্কুল থেকে নেয়া হয়েছে ১২ জন করে মোট ২৪ জন কিশোরী এবং একটি স্কুল থেকে নেয়া হয়েছে ১২ জন কিশোর। প্রতিটি স্কুলে এই ১২ জনকে নিয়ে গ্র“প করা হয়েছে। আবার স্কুলের এই শিার্থীদের অবিভাবকদের নিয়ে ১২ জন করে এক একটি গ্র“প করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনটি স্কুলের ১২ জন করে তিনটি গ্র“প এবং ঐ শিার্থীদের ১২ জন অভিবাবক নিয়ে তিনটি গ্র“প। শিার্থী ও অভিবাবক নিয়ে আলাদা করে মোট ৬টি গ্র“প করা হয়েছে। এদের প্রত্যেকের সাথে আলাদা আলাদা করে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি গ্র“পে ৩টি করে মোট ১৮টি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিলো। কর্মশালার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিলো অংশগ্রহনমূলক কর্মগবেষণা পদ্ধতি। যারা এই কর্মগবেষণায় অংশগ্রহন করে তারাই মূলত এর গবেষক। যেহেতু এ বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল বিষয় তাই অংশগ্রহনকারীরা এ বিষয়টি নিয়ে সাচ্ছন্দবোধ নাও করতে পারে, এই ধারনা থেকে একজন অভিজ্ঞ নারী এনিমেটর তাদের সাথে সার্বণিক সঙ্গ দিয়ে একে আরো সচল করে রেখেছিলো।


যে সব স্কুলে গবেষণার কর্মশালা করা হয়েছিলো
১. এম,এ,সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়
ফতেপুর, ৩ নং ওয়ার্ড
নোয়াখালী পৌরসভা
সদর উপজেলা
নোয়াখালী
২. আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
লক্ষীনারায়ণ পুর
কাদির হানিফ ইউনিয়ন
সদর উপজেলা
নোয়াখালী

৩.হাসান হাট উচ্চ বিদ্যালয়
শরিফ পুর ইউনিয়ন
উপজেলা - বেগমগঞ্জ
নোয়াখালী


এলাকার ভৌগোলিক ও অর্থসামাজিক পরিচয়
উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী শিক্ষা দীক্ষায় অগ্রসরমান একটি জেলা হিসাবে সুপরিচিত। আবার চরম ধর্মীয় অনুভূতিশীল জেলা হিসাবেও অনেকে একে চিহ্নিত করে থাকেন। তবে নোয়াখালী শহর ও গ্রামের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। জেলার গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেক গোঁড়ামীর লক্ষণ দেখা যায়। তবে পর্যবেক মহল মনে করেন, নোয়াখালী শহরের জনজীবণ দেশের অন্যান্য জেলা শহরের তুলনায় অনেক শান্ত, আধুনিক এবং প্রগতিশীল। এলাকা ভেদে এর ব্যতিক্রমও আছে। জেলায় বর্তমানে শিক্ষার হার ধীরে ধীরে অনেক বাড়ছে। নিম্ন বিত্তদের মাঝে শিক্ষার প্রতিও আগ্রহ অনেকাংশে বেড়েছে। এ অঞ্চলে বর্তমানে মেয়েদের শিক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। যে সব স্কুলে গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে সে সব স্কুলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশী। এসব স্কুলের ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের ঝরে পড়ার হার বেশী।


সেপ্টেম্বর ২০০৮ পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিনটি স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা
স্কুল ছাত্র ছাত্রী মোট
হাসান হাট উচ্চ বিদ্যালয় ৩০২ ৩৯৯ ৭০১
আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ১৮০ ২০৭ ৩৮৭
এম,এ,সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয় ১৪১ ২৫৭ ৩৯৮

যারা গবেষণার কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে-

এম,এ,সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়
১.তসলিমা আক্তার
২.নূরজাহান আকতার
৩.সুলতানা ইয়াসমীন
৪.বিবি ফাতেমা(বীথি)
৫.বিবি ফাতেমা(রুপালী)
৬.বিবি রহিমা(নিপু)
৭.ফারজানা ইয়াসমীন(রুমি)
৮.কাউছার আক্তার
৯.প্রমা পাল
১০.শাহনাজ আক্তার
১১.মমতাজ
১২.বিবি কুসুম

হাসান হাট উচ্চ বিদ্যালয়
১.রোখসানা আক্তার(মুন্নি)
২.সাহিদা আক্তার মলি
৩.বিবি আয়েশা
৪.বিবি মরিয়ম
৫.নূর ন্হার বেগম
৬.তহমিনা আক্তার সুবর্ণা
৭.নাছরিন আক্তার
৮.জান্নাতুল ফেরদৌস ফেরদৌসী)
৯.নাছরিন সুলতানা(পলি)
১০.নিলুফা ইয়াসমিন(নিশি)
১১.সঞ্জিদা আমিন(প্রাপ্তি)
১২.জান্নাতুল ফেরদৌস(নিশু)

আদর্শ হাই স্কুল
১.নিজাম উদ্দিন
২.আবদুল্লাহ আল নোমান
৩.মো:সাজ্জাদ হোসেন(সাজু)
৪.আবদুল্লাহ আল মামুন
৫.শাহদাত হোসেন
৬.মো:রোকন উদ্দিন
৭.মোহাম্মদ হাসান
৮.মো:হিমেল
৯.মো:সুজন
১০.মো:শামীম
১১.সিরাজুল হক
১২.মীর্জা এনামুল মজিদ

অভিভাবকদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবক এবং এলাকার অন্যান্য অভিভাবক ও শিকগণ। এছাড়াও এনিমেটর হিসাবে সকল কর্মশালায় সঞ্চালক হিসাবে ছিলেন তৃণমূল সংবাদকর্মী রাবেয়া সুলতানা নাজনীন।


প্রাক প্রস্তুতি
কর্মশালা শুরুর আগে আমরা প্রত্যেক স্কুলের শিক ও কয়জন অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা করি। সে সময় তাঁদেরকে গবেষণার বিষয়টি ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিষদ ব্যাখ্যা করা হয়। তাঁরা সকলেই এ বিষযটি নিয়ে এ ধরনের গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তাঁদের সহযোগীতায় গবেষণায় অংশগ্রহণকারিদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। শিকরাই তাদেরকে কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য নিশ্চিত করেন।

যে জিজ্ঞাসাগুলো নিয়ে কিশোরীদের কাছে যাওয়া

বা অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণার কর্মশালা করার জন্য স্কুলের একটি কাশরুমকে বেছে নেয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক সহ অন্যান্য শিকবৃন্দ যথেষ্ট সহযোগীতা করেন। কর্মশালা শুরুর আগে কিছু জিজ্ঞাসা সামনে তুলে ধরা হয়েছিলো। যেমন মেয়েদের বেলা ছিলোÑ


১. তোমাকে নিয়ে তুমি কী ভাবছ ?
২. বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের বিষয়টি সম্মন্ধে তোমার কোনো ধারণা আছে কিনা বা তোমার জানতে আগ্রহ আছে কিনা ?
৩. মা বাবা ও পরিবারের অন্যান্যদের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন ?
৪. এ সময় অন্যরা তোমাকে কি ভাবে দেখছে বলে তোমার মনে হয় ?
৫. তোমার মানসিক কোনো পরিবর্তন বা সমস্যা হচ্ছে বলে কি তোমার মনে হচ্ছে?
৬. তোমার কোনো শারীরিক সমস্যা কি আছে? থাকলে কি ?
৭. তোমার শারীরিক কোনো সমস্যা হলে অন্য কারো সঙ্গে কি আলাপ
আলোচনা করো ?
৮. মনের উপর কোনো চাপ বা প্রভাব পড়ছে কিনা ? পড়লে কেমন ?
৯. তুমি কোনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছ কিনা?
১০.কি ধরণের বন্ধুদের সাথে তোমার বন্ধুত্ব রয়েছে
১১.যৌন নির্যাতনের শিকার কখনো হয়েছো কিনা? যদি হয়ে থাকো তাহলে মানসিক ভাবে তোমার কি পরিস্থিতি হয়েছে? পরিস্থিতি কি ভাবে অতিক্রম করেছো?
১২. ব্যাক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে তুমি কতটুকু সচেতন? তুমি কি ভাবে তোমার যতœ নাও?
১৩. প্রথম যখন ঋতুস্রাব হয়েছে তখন তোমার বয়স কত ছিলো? এ সময় পরিবারের কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগীতা বা পরামর্শ পেয়েছো? পেলে কার কাছ থেকে ? কি রকম?
১৪. প্রথম যখন তোমার ঋতুস্রাব হয়েছে? তখন তোমার মনের অবস্থা কেমন হয়েছে? লজ্জায় কারো সাথে আলাপ না করে তুমি নিজে নিজে কি সমস্যার সমাধান করেছো? করলে কি ভাবে?
১৫. প্রতি মাসে ঋতুস্রাব না হয়ে ২/৩ মাস পরে হয় কিনা অর্থাত্ অনিয়মিত কিনা?
১৬. কোন অনুষ্ঠান উপলে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখার জন্য অবিবাহিত অবস্থায় জন্মনিয়ন্ত্রন বড়ি ব্যাবহার কর কিনা?
১৭.ঋতুস্রাব হওয়ার আগে তোমার ব্যাগে প্রাথমিক ব্যাবস্থার জন্য প্যাড জাতীয় কিছু থাকে কিনা?
১৮. প্যান্টি ব্যাবহার কর কিনা?
১৯. অতিরিক্ত ঋতুস্রাব অথবা সাদা স্রাব হয় কিনা হলে মা/বোনের সাথে অলাপ কর কিনা ?
২০. তুমি কি মনে কর এ বিষয়টি সবার জানা দরকার?
২১. আরো কোনো বিষয় যদি থাকে, বল।


এছাড়াও জড়তা কাটিয়ে উঠার জন্য কিছু প্রাথমিক আলোচনা মস্তিষ্ক ঝড় ইত্যাদির মাধ্যমগুলো ব্যবহার করা হয়। যেহেতু বিষয়টি খুব সংবেদনশীল এবং কিছু ক্ষেত্রে একান্ত গোপনীয় বিধায় স্বাভাবিকতা আনতে যথেষ্ট কৌশলী হতে হয়েছে। প্রথম বিষয়টি নিয়ে তারা হতচকিত হয়ে পড়ে। একটু পরেই বিষয়টির গভীরে গেলে তারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে। তারা যখন বুঝতে পারলো বিষয়টি তাদের জন্য খুবই প্রয়েজনীয়, তখন এক পর্যায়ে তারা অনেকেই মন খুলে কথা বলতে থাকে। আমাদেরকেও সে পর্যন্ত অপো করতে হয়েছে। তাদেরকে সন্তর্পনে বলা হয়েছিলো, ‘কোনো রকম অস্পষ্টতা বা লজ্জায় নিজেকে চেপে না রেখে মন খুলে বল। মনে রাখবে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই সব নারী পুরুষ এ সময়টি পার করে। এ সময়টি প্রত্যেক নারী পুরুষের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ। তোমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা তোমার বয়সী অন্য বন্ধুদের জন্য অনেক ফলপ্রসু হবে। বিষয়টি ভয় বা লজ্জা পাওয়ার কোনো বিষয়ই নয়।’

কর্মশালার আলোচনা যেভাবে চলমান হলো-

এম,এ,সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়, ফতেপুর, নোয়াখালী পৌরসভা
২০ আগষ্ট,’০৮ সকাল এগারটায় বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্ব্যসেবা ও পরিচর্যা বিষয়ে এম. এ. ছাত্তার. উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে অংশগ্রহণ মূলক কর্মশালার প্রথম দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।

স্কুল পরিচিতি
১৯৭৫ সনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলে রয়েছে সহশিা। বর্তমানে স্কুলে মোট ৩৯৮জন ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। তার মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১৪১জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ২৫৭জন। প্রধান শিক হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন জনাব আবুল কাশেম।

গবেষণার চলয়মানতা
আলোচনায় ১২ জন শিক্ষার্থী সহ এনিমেটর রাবেয়া সুলতানা নাজনীন এবং প্রধান গবেষক মাহমুদুল হক ফয়েজ অংশগ্রহণ করেন।
গবেষণার শুরুতে আমরা অংশগ্রহণ কারীদের সাথে পরিচিত হই। এরা সবাই প্রায় একই বয়সের। নানান আলোচনা দিয়ে শুরু হয় আলাপচারিতা। প্রথমেই নানান আন্তরিক কথাবর্তা, কৌতুক, মস্তিষ্কঝড় ইত্যাদির মাধ্যমে পরিচয়পর্ব শুরু হয়। সৃষ্টি হয় আলাপচারিতার জন্য এক সুন্দর সহায়ক পরিবেশ। তাদের সাথে কুশল বিনিময় এবং আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তাদের মাঝ থেকেই আমাদের গবেষণার বিষয়বস্তু বয়ঃসন্ধিকাল শব্দটি উঠে আসে। তাই বয়ঃসন্ধিকাল কি? জানতে চাইলে ফারজানা(১৩) বলে, যে বয়সে আমাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়ে থাকে, আমরা নিজেকে নিয়ে চিন্তিত থাকি বা নানা প্রশ্ন মনের মধ্যে জাগ্রত হয়। কিন্তু তা অন্য করো সাথে লজ্জায় আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারছিনা, সে বয়সকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে।
কাউচার (১৬) বলে, বয়ঃসন্ধিকাল এ ছেলে মেয়েরা বড় হয়। শাহনাজ (১৬) বলে এ বয়সে ছেলে মেয়েদের অনেক পরিবর্তন হয়।
বয়ঃসন্ধিকালে তাদের কি কি পরিবর্তন হয়েছে এ বিষয়ে কাউচার বলে,বয়সের সাথে সাথে মনেরও পরিবর্তন হয়। এ বয়সে নিজেকে একা একা লাগে, পরিবারের কারো সাথে মিশতে বা কথা বলতে ভালো লাগে না। কাউচার মনে করে, এ বয়সে তার ছেলে বন্ধুর প্রয়োজন। যাকে সে তার মনের সব কথা খুলে বলতে পারবে। কিন্তু আগে তার এমন মনে হত না। সে বুঝতে পারছে বয়ঃসন্ধিকালে তার মনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ছোটকালে তার আবেগ সুপ্ত ছিল কিন্তু এখন তা বিকশিত হয়েছে।
প্রমা পাল (১৪) বেশ মেধাবী চঞ্চল কাশের ’ফাষ্ট গার্ল’, কাশ কেপ্টেনও সে, হতাশার সুরে বলে, আগে খেলাধুলা করতে ভালো লাগত কিন্তু এখন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আগের মত খেলতে পারিনা। এখন খেলাধুলা করতে বিবেকে বাধে। কারণ এখন বড় হয়েছি। চুপচাপ মেয়ে ফাতেমা মৃদুস্বরে বলে, আগে আমি কাউকে ভয় পেতাম না। সবাইকে ভীতু ডাকতাম। কিন্তু এখন আমার খুব ভয় লাগে। বিশেষ করে রাস্তা দিয়ে স্কুলে হেঁটে আসতে আর ঘরে রাতে একা পড়তে বসলে। তাছাড়া নারীদের প্রতি অত্যাচার দেখলে আমার আরও বেশি ভয় লাগে। তাই সব সময় নিজেকে খুব একা একা মনে হয়। মনে হয় আমি খুব অসহায়। কিন্তু আগে এমনটি মনে হত না।’
কখন মনে হয়েছিলো তুমি একটু বড় হয়েছো, অন্য মেয়েদের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে গেছো। খেলতে খেলেতে সেই বিশেষ সময়টা তোমার এসেছিলো। আলোচনা চলতে চলতে লজ্জায় একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া শুরু করলো, তারা বুঝতে পারলো বিষয়টি। অনাগত নারী হওয়ার এ যে ‘প্রথম কদম ফুল’। বিষ্ময়ে আবেগে নিজেকে নারীর মত অনুভব করা।

প্রথম ঋতুস্রাব যখন হয়েছিল তার এ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে লুত্ফুন্নাহার (১৬) জানায়, ১১ বছর বয়সে বাড়িতে প্রথম বারের মত ঋতুস্রাব হয়। সে আগে থেকে এ বিষয়ে কিছুই জানতনা তাই রক্ত দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ভেবেছে তাকে জোঁকে ধরেছে। এ সময় সে তার মাকে বলেছিল এবং তার মা তাকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু কম বয়সে ঋতুস্রাব হয়ে যাওয়াতে তাকে অনেকে অনেক কথা বলেছে এমনকি তার মা চাচীরা পর্যন্ত গালমন্দ করেছে। একে একে বর্ণনা করছিলো তাদের তিক্ত মিষ্টি অভিজ্ঞতার কথা। কাউচার জানায়, ১৪ বছর বয়সে স্কুলে প্রথমবারের মত ঋতুস্রাব হয়, এ সময় সে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলো। লজ্জাও পেয়েছিলো। স্কুলের সহপাঠীরা তাকে সাহায্য করেছে।
তাসলিমার (১৬) প্রথম ১৩ বছর বয়সে ঋতুস্রাব হয়েছিল। তার মাকে বলেছে এবং মা তাকে সাহায্য করেছে। ফারজানা বলে, ১২ বছর বয়সে তার প্রথম ঋতুস্রাব হয়েছিল। তার বোন তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছিল। প্রথম ঋতুস্রাবের সময় লুৎফুন্নাহরের খুব ভয় লেগেছিল, ‘ভেবেছিলাম আমাকেও জোঁকে ধরেছে।’ ফাতেমা(১৫) বলে, ‘আমার খুব লজ্জা লেগেছিল আর নিজেকে খুব একা একা আর অসহায় মনে হয়েছিল’। নুরজাহান বলে, নিজেকে খুব অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। প্রমা বলে এ সময় খুব ভয় আর অস্বস্থিকর লেগেছিল। শাহনাজ বলে, এসময় নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা মনে হয়েছে। আর মনে হয়েছে আমি বড় হয়ে গেছি।
এসময় তোমার পরিবারের লোকজন বা অন্যরা তোমাকে কিভাবে দেখেছে? জানতে চাইলে লুত্ফুন্নাহার বলে, কম বয়সে ঋতুস্রাব হয়ে যাওয়াতে পরিবারের লোকজন সহ অন্যরাও অনেক বাজে কথা বলেছিল।
কাউচার বলে, এসময় মা বলেছে কারো সাথে না মেশার জন্য বিশেষ করে ছেলেদের সাথে। বলেছিলো সব সময় একা একা থাকতে।
ফারজানা বলে, এ বয়সে বাবা মা বা অন্যরা অনেক বেশী সন্দেহের চোখে দেখেন। কোন ছেলে এমনকি খালাতো, ফুফাতো, চাচাতো ভাইয়ের মত আপন কারো সাথে কথা বলতে দেখলে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে। ভাবে প্রেমালাপ করছি। সবাই কেন জানি একটু অন্য চোখে দেখে। প্রমা বলেন, আগে খেলাধুলা করলে কেউ কিছু বলতনা কিন্তু এখন আমরা নাকি বড় হয়েছি তাই খেলাধুলা করলে বা দুষ্টুমি করলে বাবা মা এমনকি স্কুলের শিকরাও বকা দেয়। সবাই বলে, ‘তোরা এখন বড় হয়েছিস । তোরা এমন করলে ছোটরা কি করবে?’
প্রথম ঋতুস্রাবের সময় খাওয়া দাওয়ার প্রতি নানান নিষেধ থাকে। এ সময় মায়েরা আনেক কিছু খেতে দেয়না। এ বিষয়ে ফাতেমা বলে, মা বলেছে পানি কম খেতে। টক, ভাজা-পোড়া, শুটকি, মাছ - মাংস খেতে নিষেধ করেছেন। কাউচার আপে করে বলে, ‘প্রথম যেদিন ঋতুস্রাব হয় সেদিন মা শুধু আলু ভাজি দিয়ে ভাত খেতে দিয়েছিল। যদিও সেদিন আমাদের মাংস রান্না করেছিল। কিন্তু আমার খাওয়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মা খেতে দেয়নি’।
এ বয়সে কেউ কেউ শারীরিক সমস্যায় ভোগে। তখন কারো আথে আলাপ করে চিকিত্সা নিতে কুন্ঠা বোধ করে। কুসুম বলে, মাঝে মাঝে তার মাসে দুই বারও ঋতুস্রাব হয়। ওদের বাড়িতে বেদ বেদেনীরা আসে। তাদের কাছ থেকে সবাই টোটকা ঔষধ নেয়। সেও নিয়েছিলো। নুরজাহান বলে, কোন কোন মাসে তার দুই বার ঋতুস্রাব হয়। শুনেছে হুজুরের কাছ থেকে ফুঁ দিয়ে পড়ে আনা পানি কচু পাতায় করে খেলে ভাল হয়ে যাবে। তাই সে হুজুরের পড়া পানি খেয়েছিল। ডাক্তারের কাছে যেতে লজ্জ লাগে বলে যায়নি। কাউছার বলে, মাসে দুই বার ঋতুস্রাব হত। তখন হুজুরের পড়া পানি খেয়েছিল। এ সমস্যা তার এখনো আছে।
ফাতেমা বলে, ঋতুস্রাবের আগে ও ঋতুস্রাবের সময় প্রচন্ড পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা ও কোমর ব্যাথা করে। কিন্তু কারো সাথে আলাপ করিনি।
নীরু বলেন, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে এবং যৌনাঙ্গ চুলকায়, কিন্তু কারো কোন পরামর্শ নেইনি। নীরু বিবাহিতা। বিয়ের পরে তার ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছিলো। ফারজানা বলে, প্রথম দুইবার ঋতুস্রাব হওয়ার পর প্রায় ৫ মাস বন্ধ ছিল। ‘তখন আমার বোনের সাথে আলাপ করেছিলাম । বলেছিল এটা এমনি হয়। আবার ঠিক হয়ে যাবে। তাই ডাক্তারের কাছে যাইনি। তাছাড়া ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক টাকা লাগবে’। ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় কি ধরনের ব্যবস্থা নেয় জানতে চাইলে, সবাই বলে তারা কাপড় বা রুমাল ব্যবহার করে। তবে কোথাও বেড়াতে গেলে মাঝে মাঝে প্যাড ব্যবহার করে। এবং সবাই প্যান্টি ব্যবহার করে।
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে তারা কতটুকু সচেতন? জানতে চাইলে, রূপালী বলে, ঋতুস্রাবের সময় আমি প্রতিদিন গোসল করি, আর পরিস্কার কাপড় পড়ি।
কাউচার বলে, ‘ঋতুস্রাবের সময় আমি প্রতিদিন দুইবার করে ব্যবহৃত কাপড় পরিস্কার করি’। আলোচনর সময় সবাই জানায়, এসময় তারা ডেটল ও ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় পরিস্কার করে।
কি ধরনের মানুষের সাথে মিশতে বা বন্ধুত্ব করতে ভালো লাগে? জানতে চাইলে,
কাউচার বলে, যদিও মা নিষেধ করেছেন ছেলেদের সাথে না মিশতে কিনতু ছেলেদের সাথে মিশতে আমার বেশী ভালো লাগে। শাহনাজ বলে একটা মেয়ে বন্ধুর চেয়ে ছেলে বন্ধু অনেক বেশী সাহায্য করে। তাই ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করতে ভালো লাগে। প্রমা বলে, চুম্বক যেহেতু বিপরীত ধর্মের প্রতি আকর্ষণ করে, তাই এ বয়সে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ থাকায় ছেলেদের সাথে মিশতে বেশী ভালো লাগে।
ফারজানা বলে, এ বয়সে যাকে দেখি তাকেই ভালো লাগে। তাকে জানতে ইচ্ছে করে এবং তার সাথে মিশতে এবং বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছে করে।

মা বাবা ও পরিবারের অন্যান্যদের সাথে আনেকেরই সম্পর্ক খুব গভীর নয়। তাসলিমা বলে, বাবা মায়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই। বাবা বিদেশ থাকেন তাই মেশার সুযোগ কম পাই।
রূপালী, নীপু দুই বোন জানায়, বাবা খুব রাগী তাই বাবাকে খুব ভয় পায়। কিন্তু মায়ের সাথে তাদের সখ্যতা।
ফারজানা বলে, মায়ের সাথে সম্পর্ক ভালো কিন্তু বাবাকে ভয় পায়।
শাহনাজের বাবা নেই। তার তিন বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। বাবার কথা খুব একটা মনে নেই তার। শাহনাজ জানায়, ‘তিন বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ায় বাবাকে কাছে পাইনি কিন্তু মায়ের সাথে সম্পর্ক ভালো’।
তারা কি কোন ভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কিনা? জানতে চাইলে
শাহনাজ বলে, আমরা বড় হয়েছি তাই ভালো খাবার ছোট ভাইকে খেতে দেয়া হয়। বাড়িতে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের কদর বেশী।
কখনো কোন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে
শাহনাজ বলে, মেলায় গেলে এ ধরনের সমস্যা হয়।
কাউচার বলে, একবার বিয়ে বাড়িতে এ ধরনের সমস্যা হয়েছিলো।
ফারজানা বলে, একবার স্যারের বাসায় প্রাইভেট পড়ার সময় স্যার আমার পায়ের উপর পা রাখে। আমি সরানোর চেষ্টা করলে স্যার খুব জোরে পা দিয়ে চেপে ধরে রেখেছিল। সেদিনের পর থেকে আমি আর প্রাইভেট পড়তে যায়নি। আর তখন আমার খুব কষ্ট লেগেছিল। এ বয়সে অনেকেই নিজেকে গিন্নি গিন্নি ভাবে। গ্রামে অনেকেরই এ বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। তাদের এক সহপাঠিনীরও বিয়ে হয়েছে। বিয়ে কি? জানতে চাইলে অনেকে বলে, বিয়ে মানে ঝামেলা, কারণ বিয়ের পর মেয়েদের কোন স্বাধীনতা থাকেনা, পরিবারের সব দায়িত্ব মেয়েদের উপর এসে পড়ে। আর একটা অপরিচিত মানুষ কিভাবে এত আপন হয়। এটা তারা ভেবে পায়না। বিয়ের জন্য কি নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়? জানতে চাইলে সবাই বলে, বিয়ের জন্য শারীরিক ও মানষিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। এটা তারা বুঝে।
বয়ঃসন্ধিকালটি সব মেয়ের জীবনে আসে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কিছু জানার সুযোগ নেই। এ বিষয়টি সম্পর্কে সবার জানা দরকার। ‘আমরা এ বিষয়ে আরও বেশি জানতে চাই। আমাদের পাঠ্য বইতে এ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করলে এবং শিকেরা এ বিষয়ে আমাদের কাশ নিলে আমরা আরও বেশি জানার সুযোগ পেতাম।’ এক বাক্যে সবাই সায় দেয়।
তাদের সাথে ৩ ঘন্টা আলোচনা করার পর দুপুর ২.০০ টায় প্রথম দিনের মত কার্যক্রম শেষ হয়।



২য় ও ৩য় দিনের কর্মশালা
এম. এ. ছাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিার্থীদের সাথে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যাা বিষয়ে ২৭ শে আগষ্ট অংশগ্রহণমূলক কর্মশালার দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
শুরুতেই আমরা সবাই সবার কুশল বিনিময় করি। এবং তাদের কাছে জানতে চাই প্রথম দিনের অংশগ্রহণমূলক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে কেমন লাগছে? জানতে চাইলে কাউচার বলে, ‘এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে, আমার সহপাঠীদের সাথে যেসব কথা আগে বলতে পারিনি এ কর্মশালায় এসে তা বলতে পেরেছি।এ কর্মশালায় বিভিন্ন সমস্যা আলোচিত হয় যাতে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি। ’
প্রমা বলে, ‘এ কর্মশালায় এসে মনের না বলা কথা গুলো বলতে পারায় খুব ভালো লেগেছে। যেসব সমস্যার কথা সহপাঠীরা আগে কখনো বলেনি কিন্তু কর্মশালায় সবাই নিঃসঙ্কোচে একান্ত কিছু কথা বলেছে আমাকে ভাবিয়েছে। আমার নতুন অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।’
ফারজানা বলে, ‘এ কর্মশালায় আমরা যেসব বিষয়ে আলোচনা করেছি যা আমি আমার ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারব। নুরজাহান বলে, আমি যে কত কিছু জানি না তা এ কর্মশালায় এসে বুঝতে পেরেছি। আর এখন উপলব্ধি করতে পারছি আমার এখনও অনেক কিছু জানার বাকী আছে।’
বিবি ফাতেমা বলে, ‘এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে যা কিছু সবার আলোচনা থেকে উঠে এসেছে এসব বিষয় আগে থেকে জানলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম, তাই আমাদের পাঠ্য বইতে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকলে অনেক ভালো হত।’
স্কুলে হঠাত্ করে ঋতুস্রাব হলে কোন ব্যবস্থা আছে নাকি? জানতে চাইলে সবাই বলে স্কুলে এই ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই তবে থাকলে অনেক ভালো হত। কারণ স্কুলে অপ্রস্তুত অবস্থায় ঋতুস্রাব হয়ে গেলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কাশ না করে ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যেতে হয়।
মাসিক বা ঋতুস্রাবের সময় ব্যবহৃত রুমাল বা কাপড় কোথায় শুকাতে দেয়? জানতে চাইলে বলে, কেউ ওড়নার নিচে, ঘরে আলনার পেছনে আবার কেউ বেড়ার উপর শুকাতে দেয়। শারীরিক কোন সমস্যা বিশেষ ঋতুস্রাবে কোন সমস্যা হলে তারা কি করে? জানতে চাইলে ফাতেমা বলে, ‘আমার ঋতুস্রাব এবং সাদা স্রাব বেশি হয়। শুনেছি কলাকচুর পাতার রস ও আদামনির রস খেলে কোমর ব্যাথা ও সাদা স্রাব কমে যায়’। কাউচার বলে, তার বোনের শারীরিক সমস্যা হওয়ায় তিনি পুকুরে গলা পর্যন্ত পানিতে নেমে ঔষধী গাছের রস খেয়েছিলো। শারীরিক কোন সমস্যা বা অন্য কোন সমস্যা হলে গ্রাম্য কোন চিকিত্সা নিয়েছে কিনা? জানতে চাইলে কুসুম বলে, আমাদের গ্রামে প্রায় সময় বেদেরা আসে আর কিশোরীদের দেখে বলে, ‘তোমাদের মাসিক কি আগে হয়? মাসিকের সময় পেট ব্যাথা করে, মুখ কালো হয়ে থাকে? তাহলে তাবিজ ব্যবহার করলে এসব ভালো হয়ে যাবে, তাদের বলা কথা গুলো সত্যি বলে সবাই বিশ্বাস করে আর ১০০/১৫০ টাকা করে এসব তাবিজ কিনে নেয়।’
নুরজাহান বলে, ‘পুরুষ ডাক্তার বলে কোন সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে যাইনা। কারণ ডাক্তারের কাছে খোলাখুলি ভাবে সব বলতে লজ্জা লাগে। তাই হুজুরের পানি পড়া খাই’। ঋতুস্রাবের সময় তারা কে কি নিয়ম মেনে চলে? জানতে চাইলে কাউচার বলে, ‘এ রকমের মেয়েরা এ সময় গরু জবাই করতে দেখেনা। কারণ এই বিশ্বাসে যে, গরু জবাই করতে দেখলে ঋতুস্রাবের সময় জবাই করা গরুর রক্তের মত বের হবে।’
ফাতেমা বলে, এসময় রাস্তায় যেতে সবাই নিষেধ করে। তবে গেলেও সাথে করে কয়লা আর রসুন সাথে রাখতে হয়। তাছলিমা বলে, এসময় সুগন্ধি জাতীয় কোন কিছু যেমন - তেল, স্নো, পাউডার এগুলো ব্যবহার করিনা।
কুসুম বলে, ‘ঋতুস্রাবের সময় চুল খোলা রাখা যায় না।’
লুত্ফুন্নাহার বলে, ‘ঋতুস্রাবের সময় কবরস্থান এবং চিতা খোলার সামনে দিয়ে হাঁটা যায়না।’
আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পর বিকেল চারটায় দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শেষ হয়।



তৃতীয় দিনের কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে আরো শত:স্ফুর্ততা ল্য করা গেছে। এসময় এরা আরো আন্তরিকতা নিয়ে নানান কথা বলে। তারা জানায়, এ সময় কোন রকম শাসন এদেরকে আরো একরোখা ও ক্ষুব্ধ করে তুলে। পরিবারের কেউ শাসন করলে কেমন লাগে? আর তখন কি করতে ইচ্ছে করে? জানতে চাইলে সবাই বলে, বকাবকি করলে, আর মারধর করলে খুব খারাপ লাগে, তখন মনে হয় আমাদের আপন কেউ নেই, মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ঘর থেকে বের হয়ে যাই।
কাউছার বলে, ভাইয়ের সাথে ঝগড়া হলে, মা মারধর করলে মাঝে মাঝে বিষ খেতে ইচ্ছে করে। লুৎফুন্নাহার বলে, মায়ের সাথে রাগ করে আমি মাঝে মাঝে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিই। একবার একাধারে তিনদিন উপোস ছিলাম। বীথি বলে, দাদু মাকে নিয়ে বকাবকি করলে মা আমাকে মারেন। আমাকে মেরে মা আবার আড়ালে গিয়ে কাঁদেন।
ফাতেমা জানায়, আমার ভাইয়ের দোষ হলেও মা আমাকেই বেশি মারেন।
ওরা বলে, জয়কৃষ্ণপুরে অনেক আগে মা মারধর করায় ট্রেনের নীচে আত্মহত্যা করেছিলো একটি মেয়ে।
কিন্তু ওরা একমত হয় যে, আত্মহত্যা কোন সমস্যার সমাধান নয়। বরং এতে সমস্যা আরও বাড়ে।
আলোচনায় ওরা বলে, নিজেদের মত করে কাজ করতে আমাদের ভালো লাগে। কেউ কিছু জোর করে চাপিয়ে দিলে খুব খারাপ লাগে । বাবা-মা মারধর করলে নিজেকে খুব অসহায় লাগে। কিন্তু বাবা-মা না মেরে বুঝিয়ে কললে ও আমরা তাদের কথা শুনি। তারা জানায়, স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য স্কুল হেল্থ কিনিকের কথা তারা জানেনা। এর অবস্থান কোথায় তারা জানেনা। আলোচনায় তারা স্কুল হেলথ কিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার ইচ্ছা পোষন করে। এর মধ্য দিয়ে ৩য় দিনের ও এপর্বের শেষ কার্যক্রম সমাপ্ত হয়



হাসান হাট হাই স্কুল, ১৫ নং শরিফপুর ইউনিয়ন, বেগমগঞ্জ উপজেলা, নোয়াখালী

বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা বিষয়ে অংশগ্রহণমূলক কর্মশালা কার্যক্রম ২৬ শে আগস্ট হাসান হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে সকাল এগারটায় প্রথম দিনের মত শুরু হয়। পূর্বের স্কুলের কর্মশালার মত আলোচনার শুরুতে আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হই এবং তাদের সাথে কুশল বিনিময় করি।

স্কুল পরিচিতি
হাসান হাট হাই স্কুল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৫ নং শরিফপুর ইউনিয়নে হাসান হাটে অবস্থিত। স্কুলে রয়েছে সহশিা। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ৭০১জন। ছাত্র সংখ্যা ৩০২জন এবং ছাত্রী সংখ্যা ৩৯৯জন। স্কুলটির পাশে দিয়ে চলে গেছে একটি সরু পাকা রাস্তা এবং তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নোয়াখালী খাল। স্কুলের প্রধান শিকের দায়িত্বে রয়েছেন জনাব মোশাররফ হোসেন। স্কুলটি ১৯৬৮ সনে প্রতিষ্ঠিত হয়।


গবেষণার চলয়মানতা
এখানেও এম,এ,সাত্তার স্কুলের কর্মশালার মত জিজ্ঞাসাগুলো আমাদের সামনে ছিলো। আলোচনার এক পর্যায়ে গবেষণা কি? জানতে চাইলে তারা বলে বিজ্ঞানীরাই গবেষণা করে।
গবেষণা মানে আলোচনা করা, কোন কিছুকে বিশ্লেষণ করা।
গবেষণা মানে অনেকে মিলে বসে কথা বলা।
গবেষণা মানে খোঁজাখুঁজি করা।
তারা খেলাধুলা করে কিনা? জানতে চাইলে আয়েশা (১৭) বলে, গ্রামাঞ্চলে এ বয়সে খেললে সবাই বিভিন্ন ধরনের বাজে কথা বলে।
রোজিনা (১৬) বলে, এ বয়সে খেলা ভালো না। তাই শরীরের জন্য ভালো হলেও বাবা মা খেলতে দেয় না।
মুন্নি (১৫) বলে, এখন বড় হয়েছি বলে খেললে গ্রামের লোকজন অনেক খারাপ কথা বলে। এখানে বিভিন্ন ধরনে কুসংস্কার রয়েছে। যা সবাই বিশ্বাস করে। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও খেলাধুলা করিনা। তাছাড়া এখন আমরা বড় হয়ে গেছি।
কিভাবে বুঝতে পেরেছে তারা বড় হয়েছে? জানতে চাইলে সবাই বলে এ বয়সে আমাদের শারীরিক অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আর শারীরিক পরিবর্তন থেকে মানসিক পরিবর্তন হয়েছে। তাই আমরা বুঝতে পেরেছি আমরা বড় হয়েছি।
কোন সময় থেকে তোমরা বড় হয়েছো? জানতে চাইলে পপি বলে, যখন প্রথমবারের মত ঋতুস্রাব হয়েছিল তখন থেকে আমি বুঝি আমি বড় হয়েছি।
প্রথম কখন ঋতুস্রাব হয়েছে? জানতে চাইলে বিবি আয়েশা (১৭) বলে, প্রথম ১২ বছর বয়সে তার ঋতুস্রাব হয়েছিল।
পপির জানায়, ১৩ বছর বয়সে তার প্রথম ঋতুস্রাব হয়।
মুন্নী জানায় প্রথম যখন তার ঋতুস্রাব হয় তখন তার বয়স হয়েছিলো ১৪ বছর। সে সময় সে খুব অস্বস্থিতে ভুগেছিলো।
প্রথম ঋতুস্রাবের সময় তাদের কেমন লেগেছিল? তখন কার সহযোগিতা নিয়েছিল? আগে থেকে এ সম্পর্কে ধারণা ছিল কিনা? জানতে চাইলে আয়েশা বলে, প্রথম ঋতুস্রাবের সময় আমার খুব ভয় লেগেছিল। আগে থেকেও এ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারিনি। বুদ্ধি করে নিজের মত করে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। পরে আমার বান্ধবীকে বলেছিলাম। সে আমাকে বলেছে কি কি করতে হবে।
পপি বলে, ‘আগে থেকে কিছুই জানতাম না। প্রথম যেদিন আমার ঋতুস্রাব হয়েছিল সেদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে আমার আপু দেখে বুঝতে পেরেছে এবং আমাকে সাহায্য করেছে’।
রোজিনা বলে, প্রথম ঋতুস্রাবের সময় আমি খুব ভয় পেয়ে কান্না করেছিলাম। তখন আমার মা আমাকে সাহায্য করেছে।
তোমরা কি কারো কাছে এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছো? জানতে চাইলে
তমা বলে, বড়রা এ বিষয়ে বলতে লজ্জা বোধ করে। আর আমরাও কিছু জানার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করতে লজ্জা বোধ করি।
আয়েশা বলে, বড়দের কাছ থেকে এসব বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে তারা আমাদের খারাপ মনে করে।
মুন্নি বলে, অনেক কিছু জানার আগ্রহ থাকলেও ভয়ে কারো সাথে আলাপ করতে পারিনা।
এসময় তারা কি ব্যবহার করে? জানতে চাইলে বলে কেউ কেউ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করলেও সবাই রুমাল ব্যবহার করে।
এসময় তাদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে কি করে? জানতে চাইলে বলে,
এসময় সবাই ডিটারজেন্ট বা সাবান দিয়ে ব্যবহৃত রুমাল পরিস্কার করে।
এবং এসময় তারা গরম পানি ও ডেটল ও ব্যবহার করে। কেউ কখনো বৈষম্যের শিকার হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে ফেরদৌসী বলে, ‘মা ছেলেদের বেশী আদর করে, তাদের বেশী খেতে দেয়। পরিবারে ভালো কিছু রান্না করলে ভাইকে বেশি খেতে দেয়।’
এ বয়সে এসে মনের উপর কি ধরনের ্প্রভাব পড়েছে? জানতে চাইল আয়েশা বলে
এ বয়সে ইচ্ছে করে কারো সাথে মিশতে , বন্ধুত্ব করতে মনের কথা গুলি বলতে কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তা পারিনা।
মুন্নী বলে ‘আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে উঠার পর তখন আমার এক সহপাঠী আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তখন তাকে কিছু না বললেও অষ্ঠম শ্রেণীতে তার সাথে আমার সম্পর্ক হয়। এ সম্পর্কের কথা জানাজানি হয়ে গেলে স্কুলের শিকেরা আমার অভিভাবককে এ ব্যাপারে জানায়। যা আমার মনের উপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছে।’
দুপুর ১.০০টায় তাদের সাথে আলোচনা শেষ করে আমরা প্রথম দিনের মত কার্যক্রম শেষ করি।

২য় ও ৩য় দিনের কর্মশালা
হাসন হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ২য় ও ৩য় কার্যক্রমের আলোচনায় এই কর্মশালা সম্পর্কে সবার অভিমত জানতে চাইলে লিপি বলে, ‘বাড়িতে মার সাথে কর্মশালার কথা বলেছি, মা বলেছে এসব নিয়ে আলোচনা করা ভালোনা’।
কিন্তু লিপি মনে করে এ বিষয়গুলো জানা দরকার। মুন্নি বলে, ‘কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে এমন অনেক বিষয় জেনেছি যা স্কুলের শিকরা কখনো আলোচনা করেনা।
এ বয়সে তাদের মানসিক অবস্থা বাবা মায়ের মধ্যে কে বোঝে? জানতে চাইলে তারাবলে, ১৪ জন শিার্থীর ১২ জনের বাবাই প্রবাসী তাই মাই বুঝে বাবা বোঝেনা। বুঝতে চায়ও না। ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে যায় কি? জানতে চাইলে সবাই বলে, মাঝে মাঝে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাই। কিন্তু দূরে কোথাও যেতে চাইলেও কখনো যেতে পারিনি।

আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। লীণারায়ণ পুর, সদর, নোয়াখালী
২৮ শে আগস্ট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সেবা ও পরিচর্যা বিষয়ক অংশগ্রহণ মূলক কর্মশালার প্রথম দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
স্কুল পরিচিতি
আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের লীণারায়ন পুর গ্রামে অবস্থিত। স্কুলে রয়েছে সহশিা। বর্তমানে স্কুলে মোট ৩৮৭ জন ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। তার মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ১৮০ এবং ছাত্রীর সংখ্যা ২০৭জন। প্রধান শিক হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন বাবু ভক্তি রঞ্জন ঘোষ।

যে জিজ্ঞাসাগুলো নিয়ে কিশোরদের কাছে যাওয়া
ছেলে ও মেয়ে একই বয়স আতিক্রম করলেও তাদের ধরণ হয় সম্পূর্ণ আলাদা। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বহির্মুখী হওয়াতে তারা এ সময় নানান ধরনের সঙ্গ পায়। ছেলেদের সাথে বয়ঃসন্ধিকালীন বিষয় আলোচনার আগে তারা ছিলো সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত। মস্তিষ্ক ঝড় সহ নানান আলোচনায় তারা স্বাভাবিকতায় ফিরে আসে। এক সময় তারা সবাই খুব খোলামেলা আলোচনা করতে থাকে। অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণায় যে জিজ্ঞাসা গুলো আমাদের সামনে ছিলো, ভাব আদান প্রদানের মাধ্যমে যানতে চাওয়া হয়েছিলো-

১.তোমাকে নিয়ে তুমি কী ভাবছ ?
২.বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের বিষয়টি সম্মন্ধে তোমার কোনো ধারণা আছে কিনা বা তোমার জানতে আগ্রহ আছে কিনা ?
৩.মা বাবা ও পরিবারের অন্যান্যদের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন? তারা কি তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারে বলে তোমার মনে হয়?
৪.এ সময় অন্যরা তোমাকে কি ভাবে দেখছে বলে তোমার মনে হয়? পরিবারের অন্যেরা তোমাকে কি সমিহ করে?
৫.তোমার মানসিক কোনো পরিবর্তন বা সমস্যা হচ্ছে বলে কি তোমার মনে হচ্ছে?
৬.তোমার কোনো শারীরিক সমস্যা কি আছে? থাকলে কি ?
৭.তোমার শারীরিক কোনো সমস্যা হলে অন্য কারো সঙ্গে কি আলাপ আলোচনা করো ?
৮.মনের উপর কোনো চাপ বা প্রভাব পড়ছে কিনা ? পড়লে কেমন ?
৯.তুমি কোনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছ কিনা?
১০.কি ধরণের বন্ধুদের সাথে তোমার বন্ধুত্ব রয়েছে? তোমার অবিভাবকরা তোমার বন্ধু বান্ধবদের চেনে?
১১.প্রথম যখন তোমার গলারস্বর পরির্তন ল করেছো তখন কি তুমি লজ্জা পেয়েছিলে?
১২.যখন তোমার প্রথম মোচ দাড়ি উঠছিলো তখন তোমার অনুভুতি কেমন ছিলো?
১৩.অপরিচিত কোনো মেয়ে বা নারিদের সাথে কথা বলতে তুমি লজ্জা বোধ কর?
১৪.মা, বোন অথবা ঘনিষ্ট জনদের সাথে অন্যদের কিভাবে তুলনা কর বা দেখ?
১৫.যৌন নির্যাতনের শিকার কখনো হয়েছো কিনা? যদি হয়ে থাকো তাহলে মানসিক ভাবে তোমার কি পরিস্থিতি হয়েছে? পরিস্থিতি কি ভাবে অতিক্রম করেছো?
১৬. ব্যাক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে তুমি কতটুকু সচেতন? তুমি কি ভাবে তোমার যতœ নাও?
১৭.তুমি কি তোমাকে সুন্দর ও আকর্শনীয় করে রাখতে চাও? কেন?
১৮.তুমি কি ধুম পান কর?
১৯.তোমার কি স্বপ্নদোষ হয়? কখন তোমার প্রথম হয়েছে? তখন কি করেছো?
২০.তুমি কি হস্তমৈথুন কর? নিয়মিত?
২১. তোমার ছোট খাট সাফল্যে কেউ কি তোমাকে খুব প্রসংশা করে? উত্সাহ দেয়?
২২.তুমি কি চাও সব কাজে তোমাকে সবাই প্রসংশা করুক, উত্সাহিত করুক?
২৩ তুমি কি মনে কর বয়ঃসন্ধি কালের বিষয়টি সবার জানা দরকার?
২৪. আরো কোনো বিষয় যদি থাকে, বল।

আলোচনায় আমরা তাদের মনে করিয়ে দেই, ‘কোনো রকম অস্পষ্টতা বা লজ্জায় নিজেকে চেপে না রেখে মন খুলে বল। এ সময়টাতে ছেলেদের অনেক কিছু দৃশ্যমান হয়। কিন্তু আরো অনেক কিছু আছে যা দৃশ্যমান নয়। যদিও এগুলো একেবারে ব্যক্তিগত বিষয় তবুও প্রত্যেকের এগুলো জানা অনেক জরুরী’। আমরা তাদের মনে রাখতে বলেছি, ‘প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই সব নারী পুরুষ এ সময়টি পার করে। এ সময়টি প্রত্যেক নারী পুরুষের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ। তোমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা তোমার বয়সী অন্য বন্ধুদের জন্য অনেক ফলপ্রসু হবে। বিষয়টি ভয় বা লজ্জা পাওয়ার কোনো বিষয়ই নয়।’

গবেষণার চলয়মানতা
আলোচনার শুরুতে আমরা সবার সাথে পরিচিত হই এবং সবার সাথে কুশল বিনিময় করি।
প্রথমে তাদের কাছে জানতে চাই গবেষণা কি? ওরা বলে গবেষণা মানে নতুন কিছু আবিষ্কার করা । গবেষণা মানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
তাদের এ বয়সকে কি বলে? জানতে চাইলে নোমান (১৬) বলে, এ বয়সকে কিশোর বলে। হাসান (১৭) বলে, এ বয়সকে বালাই বলে। কেন বালাই বলে?
হাসান বলে, এ বয়সে কিছু ভালো লাগেনা আবেগ বেড়ে যায়, সারণ দুষ্টুমি করতে ভালো লাগে, কারণ এখন হচ্ছে বয়ঃসন্ধিকাল।
এটা বয়ঃসন্ধিকাল কিভাবে বুঝলে? জানতে চাইলে তারা বলে, এ বয়সে শারীরিক গঠনের পরিবর্তন হয়েছে, কন্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়েছে। আগে দ্রুত কথা বলতে পারতাম না কিন্তু এখন পারি, পড়ালেখা করতে ইচ্ছে করেনা। আড্ডা দিতে ইচ্ছে করে।
কখন থেকে তোমাদের এ পরিবর্তন শুরু হয়েছে? জানতে চাইলে মামুন (১৬) বলে, অষ্টম শ্রেণীতে উঠার পর মনে হয়েছে আমার বিবেক বুদ্ধি হয়েছে।
নোমান (১৬) ১৪ বছর বয়স থেকে আমার দাড়ি - গোঁফ গজাতে শুরু করে।
প্রথম যখন দাড়ি-গোঁফ উঠেছে তখন তোমার কেমন লেগেছিল ? জানতে চাইলে নিজাম (১৬) বলে, প্রথম যখন দাড়ি - গোঁফ উঠেছে তখন খুব লজ্জা লেগেছিল। আর ভয় ও লেগেছিল কারন মা বলেছিল দশম শ্রেণীতে উঠার আগে যেন শেভ না করি।
সাজ্জাদ বলে এসময় সবার সামনে যেতে অস্বস্থিকর লাগে।
এ বয়সে কি করতে বেশী ভালো লাগে? জানতে চাইলে হাসান বলে, এ বয়সে বার বার চুল আঁচড়াতে ,স্মার্ট হয়ে মেয়েদের সামনে যেতে, আর বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে।
মাদকের প্রতি কার ও আসক্তি আছে কিনা? জানতে চাইলে হাসান বলে এ বয়সে মাদকের প্রতি ছেলেদের বেশি আকর্ষণ থাকে। অনেকে এ বয়সে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। হাসানের এক বন্ধুর প্ররোচনায় পড়ে সিগারেট খেয়েছিল। কিন্তু প্রথম দিনে সিগারেট খাওয়ার অভিজ্ঞতা খারাপ ছিল। তাই সে উল্টা তার বন্ধুকে সিগারেট খেতে নিষেধ করেছিল।
আকরাম জানায়, তার বন্ধু ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় মা মারা যাওয়ার পর সঠিক গাইডের অভাবে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এরপর সে চুরি করা শুরু করে এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জডিয়ে পড়ে , এমনকি এখন তার কাছে অস্ত্রও রয়েছে। নিজাম বলে তার বন্ধু মাহবুবুর রহমান নবম শ্রেণীতে উঠার পর নেশাগ্রস্থ হয়ে যায়। এক সময় সে তার বাবা মায়ের আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। পরে সে পড়ালেখা ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। ও যা চাইত বাবা মা ওকে তাই দিত।
সবাই বলে, এ বয়সে বেপথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আক্কেল দাঁত উঠেছে কিনা? জানতে চাইলে আকরাম বলে, তার আক্কেল দাঁত উঠেছে, দাঁত উঠার সময় খুব ব্যাথা করে ছিল। পরে তার আব্বু তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার বলেছে আক্কেল দাঁত উঠছে। তাই ব্যাথা করছে।
রোকন বলে, তার আক্কেল দাঁত উঠেছে। ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল।
কারও স্বপ্নদোষ হয় কিনা? হলে কেমন লাগে? জানতে চাইলে আকরাম বলে,তার স্বপ্ন দোষ হয়। বিশেষ করে রাতে খারাপ কিছু চিন্তুা করে ঘুমালে। সে আরও বলে, স্বপ্নদোষ হওয়ার পর শরীর ব্যাথা করে, শরীর অবশ লাগে।
কিন্তু প্রথমে যে এ ব্যাপারে কারও সাথে আলাপ করেনি। হঠাত্ একদিন তার নাভীর নিচে ব্যাথা অনুভূত হওয়ায় বাবা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। ডাক্তার জিজ্ঞেস করেছিল স্বপ্নদোষ হয় কিনা? কিন্তু সে লজ্জায় কিছুই বলতে পারেনি।
শাহাদাত্ বলে, বেদেরা স্বপ্নদোষ না হওয়ার জন্য তাবিজ বিক্রি করে।
কারও কোন কু-অভ্যাস আছে নাকি? এখন তারা কি করে? জানতে চাইলে ওয়াসিম বলে, ‘যৌন উত্তেজনা বেড়ে গেলে সাবান দিয়ে হস্ত মৈথুন করি।’
সুমন আর সাজ্জাদ বলেছে তারাও এমনটি করে। তারা কিভাবে এসব জেনেছে? জানতে চাইলে তারা জানায়, বাজারে বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন বই ও পর্নো বই বিক্রি করে। যা পড়ে তারা এ সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
কেউ তাদের বন্ধুদের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হয় কিনা? জানতে চাইলে
ওয়াসিম বলে ও তার বন্ধুদের সাথ যৌন কাজ করে।
এ বয়সে কি ধরনের ছবি দেখতে ভালো লাগে? জানতে চাইলে সবাই বলে তাদের রোমান্টিক ছবি দেখতে বেশি ভালো লাগে। বিশেষ করে ‘লাভ স্টোরী’ আর নাচ- গান যা দেখলে মন চঞ্চল হয়ে উঠে। বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক কেমন? জানতে চাইলে শাহাদাৎ বলে, বাবা খুব রাগী । কোন কথা বুঝতে চায়না। বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক সমস্যাটা, কষ্টটা বাবা মা বোঝেনা। মনে হয় তাদের সময় এমন ছিলনা।
কোন ব্যাপারগুলো তাদের খুব কষ্ট দেয়? জানতে চাইলে তারা বলে, ‘বাড়িতে সবাই কেমন যেন অন্য ভাবে দেখে। সবাই শুধু অবজ্ঞা করে। এমনকি অফিস আদালতে অবহেলা করা হয়। শিকেরা বিভিন্ন ধরনের অপমানমূলক কথা বলে। সময়বয়সী মেয়েরা থাকলে কোন আতœীয়ের বাড়িতে গেলে সন্দেহের চোখে দেখে। এসব ব্যাপার আমাদের আত্মসম্মানে লাগে। কেউ আমাদের সাথে রাগারাগি না করে বুঝিয়ে বললে বেশি ভালো লাগে। আমরা চাই সবার আদর আর একটু সম্মান। চাইনা কোন প্রকার বৈষম্য।’
এভাবেই আলোচনার পর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মশালার ১ম দিনের কার্যক্রম শেষ হয়।



২য় ও ৩য় দিনের কর্মশালা
আদর্শ স্কুলে ২য় ও ৩য় দিনের গবেষণায় ছেলেরা আরো খোলা মেলা আলোচনায় অংশগ্রহণ করে।
গবেষণার শুরুতে আমরা অংশগ্রহণ কারীদের সাথে কুশল বিনিময় করি।
তারপর আমরা অংশগ্রহণকারী দের ১ম দিনের কর্মশালা সম্পর্কে জানতে চাইলে।
নিজাম বলে, এ কর্মশালায় এসে আমি মনের ভেতরকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি। নোমান বলে, আমরা আগের ধারণা, অনুভূতি গুলো ছিল একরকম। এখন একটু হলেও পাল্টে গেছে। হাসান বলে, এ কর্মশালায় এসে অজানা অনেককিছু জানতে পেরেছি। আর বুঝতে পেরেছি।আমাকে আরও বেশি সর্তক থাকতে হবে। শিকদের সাথে সম্পর্ক কেমন? জানতে চাইলে সবাই বলে, ভালো। শিকদের সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
শিকেরা মারধর করে কিনা? জানতে চাইলে তারা সবাই বলে, শিকেরা মাঝে মাঝে মারলে ভালো । কিন্তু তবুও মারলে খারাপ লাগে।
বাব-মা কি তোমাদের বন্ধুকে চেনে? জানতে চাইলে বলে, সবাইকে চেনে না, বন্ধুরা বাড়িতে আসলে বাবা-মা কি স্বাভাবিক ভাবে নেয়? জানতে চাইলে বলে, সবাই বাবা-মা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়না। বিশেষ করে মেয়ে বন্ধুরা বাড়িতে আসার ব্যাপারটা সহজভাবে মেনে নিতে চায়না। আসলেই জিজ্ঞেস করে কেন এসেছে?
বাড়িতে বাজার কে করে? জানতে চাইলে সবাই বলে প্রায়, সময় বাবাই করে তবে আমরা মাঝে মাঝে করি। মামুন বলে, বাবা বিদেশ থাকায়, আমি আর মাই বাজার করি।
বাব-মায়ের আর্থিক অবস্থা সম্পর্ক নিয়ে কি ভাবে? জানতে চাইলে সবাই বলে, বাবা- মায়ের আয় নিয়ে ভাবি। বাবামায়ের কাছ থেকে মাঝে মাঝে কি আবদার কর? জানতে চাইলে বলে, মাঝে মাঝে কিছু দরকার হলে চাই। না দিলে কি কিছু কর? জানতে চাইলে সুজন বলে, না দিলে মেজাজ গরম করি। চিত্কার করে কথা বলি। মাঝে মাঝে জিনিস পত্র ভাঙ্গি। খেলাধুলা করলে কিছু কি বলে? জানতে চাইলে বলে, মাঝে মাঝে খেলাধুলা করতে নিষেধ করে।
পরিবারে বাবা-মায়ের কি ঝগড়া হয়? সবাই বলে, প্রায় সময় বাবা-মায়ের ঝগড়া হয়। তখন কেমন লাগে? জানতে চাইল হাসান বলে, তখন মনটা খুব ছোট হয়ে যায়। ইচ্ছে করে তখন বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। রোকন বলে বাবা-মা ঝগড়া করলে খুব খারাপ লাগে। কোন কাজ করতে এমনকি পড়ালেখা করতেও তখন ভালো লাগে না। তুমি কি বাবা-মাকে বোঝাও? জানতে চাইলে সবাই বলে, মা কে বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু বাবাকে বুঝাতে সাহস পাইনা। কারও বাবা ২ বিয়ে করেছে কিনা? জানতে চাইলে সবাই বলে তাদের কারও বাবা দুই বিয়ে করেনি। তবে তাদের এক বন্ধুর বাবা দুই বিয়ে করায় বাবা-মায়ের প্রায় ঝগড়া হয়। তা সহ্য করতে না পেরে তাদের বন্ধু পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। এমনকি সে ঘর থেকেও বের হয়ে যায়।
কেউ প্রশংসা করলে বা কোন কাজে উত্সাহ দিলে কেমন লাগে? জানতে চাইলে সবাই বলে কেউ প্রশংসা করলে খুব ভালো লাগে তারা আরও বলে, আমরা ভালো কিছু করলেও আমাদের সামনে কেউ প্রশংসা করেনা। পেছনে করে। বলে যে সামনে প্রশংসা করলে আমরা নাকি সুযোগ পেয়ে যাব।
ভালো কিছু করলে কি ধন্যবাদ দেয়? জানতে চাইলে বলে না কেউ কখনো ধন্যবাদ দেয়না। ধন্যবাদ দেয়াটা কি দরকার? দিলে কি করতে জানতে চাইলে? সবাই বলে ধন্যবাদ দেয়াটা খুবই দরকার। ধন্যবাদ দিলে কাজের স্পৃহা বাড়ে। ঐ ধরনের ভালো কাজ করার ইচ্ছা জাগে মনে। খারাপ রেজাল্ট করলে সবাই কি করে? সবার কাছে এখন কি আশা? জানতে চাইলে বলে, খারাপ রেজাল্ট করলে সবাই বকাবকি করে। যা আশা করি না। আশা করি সবার সান্ত্বনা।
সবাই কি সবার জন্ম দিন জানে? জানতে চাইলে বলে, আমরা অনেকে আমাদের সঠিক জন্ম তারিখ জানি না। বাবা-মা আমাদের জন্ম তারিখের সঠিক হিসাব রাখেনি।
কেউ কি জন্ম দিন পালন করে? জানতে চাইলে বলে, আমরা কেউ আমাদের জন্ম দিন পালন করিনা। কারণ জন্মদিন পালন করার সে সামর্থ্য আমাদের নেই।
পরিবারের কেউ কি এসময় উপহার দেয়? জানতে চাইলে বলে, ‘না, আমাদের জন্ম দিনের কথা আমাদের পরিবারের সদস্যরা মনে রাখে না। কেউ কোন উপহারও দেয়না। এমনকি উইসও করে না। করলে অনেক ভালো লাগত।
পরিবারের সবাই কি একসাথে খেতে বসো? জানতে চাইলে বলে, সবাই একসাথে খায় না।
আলোচনা শেষে অংশগ্রহণকারীরা বলে, ‘এ বয়সটা হচ্ছে ঘুড়ির মতো, কাইট খাইলে শেষ।’

অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি
কিশোর কিশেরীদের সাথে কর্মশালার পর আমরা প্রত্যেক স্কুলের অভিবাবকদের নিয়ে কর্মশালা করি। প্রত্যেক স্কুলে আলাদা আলাদা করে পর পর ৩ দিন কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অভিভাবকদের সাথে কর্মশালায় কিশোর কিশোরীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়গুলো আলোচনার মধ্যে ছিলো।

যে জিজ্ঞাসাগুলো নিয়ে অভিভাবকদের কাছে যাওয়া
বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ সেবা ও পরিচর্যা বিষয়ে অনেক অভিভাবকই অনেকটা উদাসিন। অভিভাবকদের সচেতনতাও অনেক কম দেখা যায়। গবেষণায় যে জিজ্ঞাসাগুলো অভিবাবকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছিলো সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে চলে আসে। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো-
১.আপনার সন্তানের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?
২.সন্তানের বয়ঃসন্ধিকালের বিষয়ে আপনি কি খেয়াল রাখেন?
৩.তার আচার অচরনের প্রতি কি কখনো খেয়াল রাখেন? আপনি কি খুব সতর্ক?
৪.এ সময়টি আসার আগে আপনি কি তাকে আগেই কোনো ধারনা দিয়েছিলেন?
৫.এ সময় আপনি কি তাকে শাসন করেন? শাসনের ধরণ কেমন?
৬.তাকে কি কখনো মারধর করেছেন?
৭.তার কথাকে কি কখনো প্রাধান্য দেন? তাকে কি খুব নিয়ম শৃক্সলার মধ্যে রাখেন?
৮.তার ছোট খাট সাফল্যে তাকে কি প্রশংসা করেন? তাকে কি উপহার দেন? দিলে কি ধরনের?
৯. তার কোনো ভুল হলে তাকে কি কখনো ভত্সনা করেন?
১০.তার মান সন্মানের দিকে কখনো কি ল্য রাখেন?
১১.তার বন্ধু বান্ধবদের কি আপনি চেনেন?
১২.তাকে কি প্রস্রয় দেন? তাকে টাকা পয়সা দেয়ার বেপারে অপনি কি সতর্ক?
১৩.তার শারিরীক পরিবর্তনের সময় তাকে কি কোনো সহযোগীতা করেন? কোনো পরামর্শ দেন? দিলে কি ভাবে? না হলে সে কি ভাবে সমাধান করে?
১৪.পারিবারিক কোনো সমস্যায় তার সাথে কি খোলামেলা অলোচনা করেন?
১৫.পরিবারিক কোনো ঝগড়া ঝাটিতে তার আচার আচরণ কেমন হয়, তাকি কখনো ল্য করেছেন? এর জন্য তার উপর কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা তাকি কখনো ল্য রেখেছেন?
১৬.সে কি কোনো কু-অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ছে?
১৭.পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে আলাপ আলোচনা বা গল্প করেন?
১৮.পরিবারের সবাই একসাথে বসে কি খাওয়া দাওয়া করেন?
১৯.সন্তানদের নিয়ে একসাথে কি বেড়াতে যান?
২০.নিকট আত্মীয় স্বজনদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?
২১.তার ছোট খাট আবদার কি রা করেন?
২২.বাবা মায়ের মধ্যে কার সঙ্গে তার বেশী সম্পর্ক?

আলোচনার এক পর্যায়ে সকলের সাথে মত বিনেময় হয় যে, ‘পিতা মাতার সবচেয়ে বড় সম্পদ তার সন্তান। সন্তানের সাফল্য নিশ্চই সকলে চান। সে শুধু প্রত্যেকের নিজ নিজ সন্তানই নয়, রাষ্ট্রেরও বড় সম্পদ। শিশু কিশোরদের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপিট তার পরিবার। তার সবচেয়ে বড় বন্ধু তার বাবা মা। তার সবচেয়ে বড় সাথী তার পরিবারের সদস্যরা। বয়ঃসন্ধি কালটি জীবনের একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় তাদের শারীরিক মানসিক নানান পরিবর্তন ঘটে। সে প্রবেশ করে পৃথিবীর এক বিশাল জ্ঞানের জগতে। সে দেখতে পায় প্রকৃতির ননান রহস্যকে। সামান্যতম অবহেলা অবজ্ঞা তাকে বিুব্ধ করে তুলতে পারে। পারিবারিক ও সামাজিক স্নেহ মমতার বন্ধনে এ সময়টি সে সুন্দর ভাবে অতিক্রম করতে পারবে। এ সময়টিতে তার দরকার পারিবারিক ও সামাজিক নিবীড় পরিচর্যা।’

এম.এ. ছাত্তার স্কুল
বয়ঃসন্ধিকালীণ স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা বিষয়ে অভিভাবকদের সাথে আলোচনা সভার মাধ্যমে ২৮ শে আগস্ট এম.এ. ছাত্তার স্কুলে আমাদের ১ম দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় শিার্থীদের অভিভাবক সহ স্কুলের শিক মন্ডলী এবং প্রধান গবেষক মাহ্মুদুল হক ফয়েজ ও এনিমেটর রাবেয়া সুরতানা অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা শুরুর পূর্বে সবাই সবার পরিচয় দেন। পরে অভিভাবকদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনাকালে সন্তানদের সাথে তাদের কেমন সম্পর্ক জানতে চাইলে অভিভাবক পারভীন আক্তার বলেন, ‘ওদের বাবা প্রবাসী। তাই ওদের সব তো এখন আমি । বাবাও আমি আবার মাও আমি। ওদের আদর করি আবার শাসন ও করি। ওদের সাথে হাসি আর ওদের বোঝাই।’
অভিভাবক আবুল কাশেম বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুত্বর্পূণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে মেয়েলি ব্যাপারগুলি নিয়ে আমি আমার মেয়ের সাথে আলাপ করিনা। এ ব্যাপারগুলি ওরা মায়ের সাথে আলাপ করে। আমি কখনো এ ব্যাপারে জানতে চাইনি। ওরা যেহেতু লেখাপড়া শিখছে তাই ওরাই সচেতন।’ একজন অভিভাবক বলেন, আমার সন্তানেরা আমাকে ভয় পায় বলে, আমার সাথে কম মেশে, আমার সামনে আসতে চায়না। এমনকি এক টেবিলে বসে ভাতও খায় না।
আরেক অভিভাবব বলেন, ‘আমার সন্তানেরা ওদের মাকে ভয় পায় বলে আমার সাথে বেশি মেশে।’
কখনও কি আপনার সন্তানদের শাসন করেছেন? করলে কিভাবে করেছেন? জানতে চাইলে অভিভাবক আবুল কাশেম বলেন, ‘শাসন করেছি তবে ছোটবেলায় পড়ার সময় কিছু না বুঝলে মারতাম। এখন আর মারি না।’
অভিভাবক পারভীন আক্তার বলেন, ‘এখনকর যুগে গায়ে হাত উঠানো ঠিক না। তাই ওদের বুঝাই।’
এক অভিভাবক বলেন, ‘না মারলে কি সন্তান মানুষ করা যায়?’
না মেরে কি শাসন করা যায়না? জানতে চাইলে স্কুলের এক শিক বলেন, ‘বেত ছাড়া টিচিং করলে ছাত্ররা মানে না, কথা শুনতে চায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঐ স্কুলের শিক সাহাবুদ্দিন ছাত্রদের সবচেয়ে বেশি শাসন করেন। তাই তাঁর কাশে ছাত্রদের উপস্থিতিও বেশি। সবাই স্যারের কথা শোনে, এমনকি অভিভাবকেরাও। কারণ স্যার শুধু বেত দিয়ে শাসন করেননা। তাদেরকে আদরও করেন। আবার সুন্দর করে বোঝানও।’
শিকেরা বলেন, ‘শুধু বেতের শাসন নয়, ভাবের শাসন আর দৃষ্টির শাসনও থাকতে হয়’। তবে সবাই মনে করেন, ‘স্যারদের শিক্ষা কম থাকলে শাসন করলেও তা ফলপ্রসূ হয়না।’
বয়ঃসন্ধিকালের আগে কি সন্তানদের সচেতন করেছেন? জানতে চাইলে, পারভীন আক্তার বলেন, ‘আমি আমার সন্তানকে এসব আগে থেকে জানিয়েছি।’
অভিভাবক আবুল কাশেম বলেন, ‘ওদের মা এ সম্পর্কে ওদের বলেছে।’
স্কুলে মেয়েদের অপ্রস্তুত অবস্থায় ঋতুস্রাব হয়ে গেলে কোন ব্যবস্থা আছে কিনা ? জানতে চাইলে প্রধান শিক আবুল কাশেম বলেন, ‘তাঁর স্কুলে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে থাকলে ভালো হত। আর এটা থাকাটা খুব দরকার বলে তিনি মনে করেন।’
অভিভাবকদের সাথে আলোচনা শেষ করার মাধ্যমে আমরা এম.এ.ছাত্তার স্কুলে আমাদের দিনের কার্যক্রম শেষ করি।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীঅভিভাবকরা আরো আগ্রহ নিয়ে আলোচনায় যোগ দেন।
আলোচনায়, উক্ত স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারোয়ার-ই-দীন বলেন, এসময়টি কিশোর কিশোরীদের ক্রান্তিকাল। মনীষী কার্ল মার্কসের একটি উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, একটি কেচোঁ যখন চলতে থাকে এখন সে সোজা পথেই চলে। চলার পথে যখন কোনো পাথর সামনে পড়ে বাধার সৃষ্টি করে, তখন সে সামনে পিছনে গিয়ে বিভিন্ন দিকে তাকিয়ে বিকল্প পথে তার পথ খুঁজে নেয়। এবং একসময় পাথর অতিক্রম করে আবার তার পথ চলা শুরু করে।
ঠিক তেমনি কিশোর কিশোরীদের চলার পথও এরকম। তাদের চলার পথে কোন বাধা দিলে সে বক্র পথে চলে যায়, কখনো কখনো সে বিগড়ে যায়। তাই তাদের চলার পথটি সবসময় মসৃণ রাখতে হবে, তাদের চলাটাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, এ কাজটা করতে পারে অভিভাবক ও সমাজ। অন্য অভিভাবকরা এ সময়টা জীবনের বাঁক বলে মন্তব্য করেন।



হাসান হাট উচ্চ বিদ্যালয়
হাসান হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের পরপর ৩টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্ম শালায় হাসান আট হাই স্কুলের অভিভাবকরা নানান আলোচনায় অংশগ্রহন করেন। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক বলেন, এ বিষয়ে বেশি আলাপ না করাই ভালো। মেয়েরা নিজেরাই তাদের ব্যাপারগুলো বোঝে। অভিভাবক গোলাম মাওলা বলেন, এ ব্যাপারে ওদের মা খেয়াল রাখেন। অভিভাবক দেবব্রত দাস বলেন, ছেলেমেয়েদের এসব ব্যাপার তাদের মারা দেখাই ভালো।
অভিভাবক রাজলী চ্যাটার্জি বলেন, মেয়েরা এসব ব্যাপারে এখন নিজেরাই সচেতন তাই আলাপ করেননা। সন্তানদের মারধর করার বিষয়ে অভিভাবক গোলাম মাওলা বলেন, ছোটকালে মারলেও এখন মারিনা। স্কুলের শিক গোলাম মাওলা বলেন, স্কুলে মেয়েদের শাসন করার জন্য বেত ব্যবহার করা হয়। মারলে তারা বিুদ্ধ হয়। তিনি মনে করেন, বাচ্চাদের মারা উচিত্ নয়। ছেলেমেয়েদের সাথে একসাথে খাবার খান কিনা? জানতে চাইলে অভিভাবক ইসমাইল হেসেন বলেন, মাঝে মাঝে ছেলেমেয়েদের সাথে একসাথে খেতে বসলেও কথাবার্তা বা গল্প করা হয়না। স্কুলে মেয়েদের মাসিক অর্থাত্ ঋতুস্রাবের সময় কোন ব্যবস্থা আছে কিনা? জানতে চাইলে স্কুলের শিক্ষয়িত্রী রাজলী চ্যাটার্জি বলেন, এ ধরণের কোন ব্যবস্থা স্কুলে নেই, এমনকি স্কুলে মেয়েদের আলাদা কমনরুম বা ড্রেসিংরুমও নেই। তবে এ অবস্থায় মেয়েরা ছুটি চাইলে ছুটি দেওয়া হয়। অভিভাবকরা সবাই এক মত হয়ে বলেন, স্কুলে এধরণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় এসময় মেয়েরা ৬/৭ দিন স্কুলে আসেনা। তাই সবাই মনে করে স্কুলে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে আরও ভালো হত। এবং অভিভাবক হিসাবে বাবা-মাকে এসময় আরও সর্তক হতে হবে।


আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের পরপর ৩টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় সবাই ছিলেন শত:স্ফূর্ত।
মামুনের বোন শাহানারা বেগম বলেন, ৫ বোনের এক ভাই মামুন। ৪র্থ/৫ম শ্রেণীতে উঠার পর তার পরিবর্তন শুরু হয়। আগে সে ঘর থেকে বের হতনা। এখন প্রায় সময় বাইরেই আড্ডা দিয়ে সময় কাটায় সে। কারও কথা শুনে না। সবার সঙ্গে একসাথে খাবার খায় না। শাহানারা বেগম আরও বলেন, আমার বাবা খুব রাগী। আগে ওকে খুব মারধর করত। আমরাও ওর সাথে খুব কম কথা বলি। শাহানারা আরো বলেন, আমরা সবাই ফলের আশা করি। কিন্তু গাছের পরিচর্যা ঠিক মত করিনা। তেমনি আমরা সবাই ওদের কাছে ভালো কিছু আশা করি। কিন্তু উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের বুঝতে না পেরে ওদের সাথে ভালো ব্যবহার করিনা।
আপনার সন্তানের সাথে সম্পর্ক কেমন? জানতে চাইলে রোকনের বাবা মোঃ মোস্তফা বলেন, আমার সাথে ওর সম্পর্ক মোটামুটি ভালো। ও পড়ালেখা ভালো করার জন্য ওর ভাব ভঙ্গিমা আর মনের কথা জানার চেষ্টা করি। এ সময় কয়জন অভিভাবক বলেন, বর্তমান যুগ বেশি ভালোনা। তাই বেশি বন্ধু সুলভ আচরণ করিনা। করলে ও আশকারা পেয়ে যাবে।
অভিভাবক তাজুল ইসলাম বলেন, আমি আমার সন্তানের খোঁজ খবর নিই।
সন্তানের বয়ঃসন্ধিকালের বিষয়ে কি খেয়াল রাখেন? জানতে চাইলে সবাই বলেন ‘না, এ ব্যাপারে আমরা কোনো প্রকার খেয়াল করিনা।
সন্তানদের কি শাসন করেন? জানতে চাইলে সবাই বেলন, ভূল করলে তো শাসন করবই। তবে যখন থেকে বুঝলাম ওরা বড় হচ্ছে তখন থেকে মারধর করিনা। মারলে কখনো শুধরায় না। ছেলেমেয়েদের সাথে নিবীড় সান্বিধ্যের জন্য পারিবারিক আলাপ আলোচনার বিকল্প নেই। এ ব্যপারে অভিভাবকরা বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের সময় দিইনা। তাদের সাথে বসে গল্প করা হয়না।’
আপনি কি আপনার ছেলের বন্ধুদের চেনেন? ওদের কিভাবে দেখেন? জানতে চাইলে অভিভাবক শাহীন বলেন, ওদের সব বন্ধুকে চিনি না। ভালো বন্ধুদের সাথে মিশলে মিশতে দিই। কিন্তু খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশলে বাধা দিই।
আরেক অভিভাবক বলেন, ছেলে মেয়েরা কার সাথে মেশে এ ব্যাপারে বাবা মায়ের সচেতন হওয়া দরকার। আলোচনায় অভিভাবকরা বলেন এসব বিষয়ে পাঠ্যপুস্তকে থাকা দরকার।

তিনটি স্কুলের অভিভাবকদের মাঝে প্রায় একই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিধ্বনিত হয়।



গবেষণায় যে বিষয়গুলো পওয়া গেছে

১.এ সময় কিশোর কিশোরীরা হয়ে পড়ে চঞ্চল এক রোখা
২.এ বয়সে তাদের মন মানসিকতায় উদাসিনতার ভাব ল্য করা যায়
৩.এ বয়সে ছেলে ও মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়।
৪.মেয়েদের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক আগেই ঋতুস্রাব হয়ে যায়।
৫.মেয়েরা লজ্জায় এ বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে আলাপআলোচনা করেনা।
৬.অনেক মেয়ে জটিল মেয়েলী রোগে ভুগছে
৭.এ সময় তারা টোটকা ঔষুধ ব্যাবহার করে
৮.মা বাবারা প্রায় ত্রে থাকেন উদাসিন
৯.কেউ কেউ লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে।
১০.ছেলেদের নতুন দাড়িমোচ উঠলে লজ্জা পায়।
১১.ছেলেদের ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হয়।
১২.ছেলেরা হস্তমৈথুনে অভ্যস্ত।
১৩.আনেক ছেলে মাদকে আসক্ত ।
১৪.ছেলেরা বন্ধুদের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হয়।
১৫.বাবা মায়েরা এদেরকে বুঝতে পারেনা।
১৬.বাবা মায়েরা মারধর করেন।
১৭.সমাজ এদেরকে সন্দেহের চোখে দেখে।
১৮. পড়ালেখায় অমনযোগী।
১৯.ঋতুকালীন সময়ে স্কুলে মেয়েদের জন্য ফাষ্টএইডের ব্যবস্থানেই।
২০.স্কুলে মেয়েদের জন্য ড্রেসিংরুম নেই
২১.ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শিার হার বেশী।
২২.এ বয়সে মেয়েরা খেলাধুলো করলে সমাজ ভালো চোখে দেখেনা।



সুপারিশ:
১.কিশোর কিশোরীদের মারধর না করে তাদের সাথে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলা।
২.স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের মারধর, নির্যাতন বা শারিরীক শাস্তি না দিয়ে ওদের প্রতি আরো বেশী মনোযোগী হওয়া।
৩.বয়ঃসন্ধিকাল বিষয়ে পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা।
৪.প্রত্যক স্কুলে মেয়েদের ঋতুকালীন সময়ের জন্য ফাষ্টএইডের ব্যাবস্থা করা।
৫.প্রত্যেক স্কুলে মেয়েদের বাথরুমের পাশে ড্রেসিংরুমের ব্যাবস্থা করা।
৬.হস্তমৈথুন, সমকামিতার কুফল সম্পর্কে কিশোরদের মাঝে প্রচারণা চালানো।
৭.স্কুল হেল্থ কিনিকে বয়ঃসন্ধিকালীন বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা।
৮.প্রত্যেক স্কুলে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের প্রসার করা।
৯.স্কুল গুলোতে লইব্রেরী পঠচক্র এবং নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৯.যে কোনো সাফল্যে এদেরকে সামাজিক ভাবে পুরষ্কৃত করা ও বিশেষ ভাবে সন্মান করা।
১০.সামাজিক ও জনকল্যান মুলক কাজে কিশোর কিশোরীদের সম্পৃক্ত করা










No comments: